Islam (ইসলাম), Law (আইন), Muslim Farayez Law, Osiyyot (অসিয়্যত), Religion (ধর্ম)

The Importance, Virtues and Methods of an Osiyyot (অসিয়্যত এর গুরুত্ব, ফযীলত ও পদ্ধতি)

অসিয়ত / উইল এর বিধান

অসিয়ত / অছিয়ত হলো আরবী শব্দ। যার অর্থ ভবিষ্যৎ দান৷ অসিয়তের আভিধানিক অর্থ হলো অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ।
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কেমন করে বন্টন করা হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বে লিখিত বা মৌখিকভাবে নির্ধারন করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষনাই হলো অছিয়ত ৷

শরয়ী পরিভাষায় অসিয়ত বলা হয়, স্বীয় সম্পত্তির একাংশ বিনিময় বিহীন কাউকে দান করা, যার পরিমাণ (ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর) সমূদয় সম্পত্তির  এক তৃতীয়াংশের বেশী না হয়।

 

পৃথিবীতে মানুষের মালিকানাধীন বলতে প্রকৃত অর্থে কিছু নেই। মানুষ নিজেও নিজের মালিক নয়। মানুষের মালিক আল্লাহ। মানুষের মালিকানায় যা কিছু থাকে, এসবেরও প্রকৃত মালিক আল্লাহ। মানুষকে এসব আল্লাহ দান করেন আমানত হিসেবে, নেয়ামত হিসেবে। মানুষের জীবন ও সম্পদ কোনোটাই স্থায়ী নয়। যেকোনো মুহূর্তে যে কারও ডাক চলে আসতে পারে পরপারের। তাই পার্থিব জীবনের মালিকানাধীন সম্পদ মৃত্যুর আগেই অছিয়তের মাধ্যমে অন্যদের মালিকানায় অর্পণ করে যাওয়া কর্তব্য। একজন মুসলমান পার্থিব জীবন এমনভাবে অতিবাহিত করবে, যেন সে কোনো মেহমানখানায় অবস্থানরত ক্ষণকালের মেহমান বা মুসাফির। যে মুহূর্তে তার প্রস্থানের নির্দেশ আসবে, আর সে এর জন্য প্রস্তুত। 

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলিমের ওছিয়ত করার মত কোনো বিষয় রয়েছে, তার জন্য উচিত নয়, ওছিয়ত অলিখিত অবস্থায় দু’রাত অতিবাহিত করা।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২৭)

ফায়দা: হাদীসের দাবি হল, মুসলমানকে তার প্রতিদিনের কাজ-কারবার ছাফ রাখতে হবে। কারো সাথে কোনো দেনা-পাওনা থাকলে তা লিখে ওছিয়ত করে রাখবে। একজন মুসলিম পার্থিব জীবনে এমনভাবে থাকবে, যেভাবে একজন সিপাহী সীমান্তচৌকিতে পাহারারত থাকে। যে কোনো মুহূর্তে তার প্রস্থানের নির্দেশ আসুক সে এর জন্য প্রস্তুত থাকে।

অসিয়তের মাধ্যমে কোন উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করা কবিরা গুনাহ।
শরিয়তের বিধানকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো অসিয়ত করলে তা পালন করা ওয়ারিশদের কর্তব্য নয়। যেমন সমস্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওয়ারিশ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া অথবা কোনো একজন ওয়ারিশকে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া – এসব অসিয়ত অনুচিত ও শরিয়ত পরিপন্থি। ওয়ারিশ ও উত্তরসুরিদের জন্য এ ধরনের অসিয়ত ক্ষতিকর। যে ব্যক্তি এ ধরনের অবৈধ অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবে, তাকে জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো পুরুষ বা নারী ষাট বছর যাবৎ আল্লাহর ইবাদত করে। অতঃপর তাদের নিকট মৃত্যু পৌঁছলে (মৃত্যুর লক্ষাণাদি প্রকাশ পেলে) তারা যদি অন্যায় অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশদের ক্ষতি করে তা হলে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন আবশ্যক হয়ে যায়।’ (তিরমিজি : ২২৬৩; আবু দাউদ : ২৮৬৯)

এ ছাড়াও যে ব্যক্তি নিজের ওয়ারিশদেরকে অতিরিক্ত অসিয়তের মাধ্যমে মিরাস বা উত্তরাধিকারী সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবেন। কারণ অতিরিক্ত অসিয়ত দ্বারা ওয়ারিশদের সম্পদ কমিয়ে ফেলা বা তাদেরকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনটি ইসলামে জায়েজ নেই।

তবে অসিয়তকারী তার ওয়ারিশদের মধ্যে দ্বীনের দিকটা প্রাধান্য দিয়ে কারও ব্যাপারে মিরাসি সম্পত্তির কিছু অংশ বেশি দেওয়া জায়েজ আছে। উদাহরণস্বরূপ নিজের ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ আলেম থাকলে তখন ওই আলেম ওয়ারিশের জন্য নিজের সম্পদের অতিরিক্ত কিছু অংশ অসিয়ত করতে পারবে। (ফাতহুল মারাম)

সুতরাং দ্বীনি কারণ ছাড়া কারও জন্য অতিরিক্ত অসিয়ত করা জায়েজ নেই। যদি কোনো ব্যক্তি নিজের ওয়ারিশদের সঙ্গে প্রবৃত্তির প্ররোচনায় অসিয়ত বিষয়ে অবিচার করবে, সে জান্নাত লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশের অংশ কর্তন করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতের মিরাসের অংশ কর্তন করবেন।’ (ইবনে মাজা : ২৮০৭)

সম্পদের এক তৃতীয়াংশে অসিয়ত করা যায় – সূরা বাক্বারা ১৮০

অসিয়ত পরিবর্তন করা গোনাহের কাজ – সূরা বাক্বারা ১৮১

অসিয়তকারী ভুল করলে সংশোধন করে নেয়া যাবে – সূরা বাক্বারা ১৮২

অসিয়তের সময় সাক্ষী রাখা প্রয়োজন – সূরা মায়েদা ১০৬


সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা, আয়াত ১৮০ঃ

তোমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বৈধভাবে ‘অসিয়ত’ করার বিধান দেওয়া হল। ধর্মভীরুদের জন্য এটা অবশ্য পালনীয়।


তাফসীরে জাকারিয়া
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মতে অসিয়াত সম্পর্কিত এ নির্দেশটি ‘মীরাস’-এর আয়াত দ্বারা রহিত করে দেয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, মীরাসের আয়াত সে সমস্ত আত্মীয়দের জন্য অসিয়াত করা রহিত করে দেয়া হয়েছে, যাদের মীরাস নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব আত্মীয়ের অংশ মীরাসের আয়াতে নির্ধারণ করা হয়নি, তাদের জন্য অসিয়াত করার হুকুম এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। তবে আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, যেসব আত্মীয়ের জন্য মীরাসের আয়াতে কোন অংশ নির্ধারণ করা হয়নি, তাদের জন্য অসিয়াত করা মৃত্যুপথযাত্রীর পক্ষে ফরয বা জরুরী নয়। সে ফরয রহিত হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজনবিশেষে এটা মুস্তাহাবে পরিণত হয়েছে।

অসিয়াত সম্পর্কিত এ আয়াতের নির্দেশ একাধারে যেমন কুরআনের মীরাস সম্পর্কিত আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে, তেমনি বিদায় হজের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশের মাধ্যমেও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর বর্ণিত হাদীসটি রহিত হয়ে গেছে। বিদায় হজের বিখ্যাত খোতবায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক হকদারের হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন থেকে কোন ওয়ারিসের জন্য অসিয়াত নেই”। [তিরমিযী: ২১২০, আবু দাউদ: ৩৫৬৫, ইবনে মাজাহ: ২৭১৩]। তবে আলেমগণের সর্বসম্মত অভিমত অনুযায়ী মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিগণের পক্ষে এখনো তাদের মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আসিয়াত করা জায়েয। 

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
‘অসিয়ত’ (উইল) করার এ নির্দেশ উত্তরাধিকার বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা রহিত হয়েছে। নবী করীম (সাঃ)-এর উক্তি হল- অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক অধিকারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়ে দিয়েছেন (অর্থাৎ, ওয়ারেসীনদের অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন)। অতএব কোন উত্তরাধিকারের জন্য অসিয়ত করা জায়েয নয়। (আবূ দাউদ ২৮৭০, তিরমিযী ২১২১, নাসায়ী ৩৫৮১, ইবনে মাজা ২৭১৩, আহমদ ১৭২১২নং) তবে এমন আত্মীয়ের জন্য অসিয়ত করা যাবে, যে ওয়ারিস নয়। অনুরূপ সৎপথে ব্যয় করার জন্য অসিয়ত করা যাবে আর তার সর্বাধিক পরিমাণ হল (মোট সম্পত্তির) এক তৃতীয়াংশ। এর বেশী অসিয়ত করা যাবে না। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ফারায়েয, পরিচ্ছেদঃ মীরাসুল বানাত) 

অসিয়ত পরিবর্তন সাধন পাপঃ সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা, আয়াত ১৮১
‘যদি কেউ অসিয়ত শোনার পর তাতে কোন পরিবর্তন সাধন করে তবে যারা পরিবর্তন করে তাদের উপর এর পাপ পতিত হবে।’ 


অসিয়তের ভুল / পক্ষপাতিত্ব / অপরাধমূলক সিদ্ধান্তের সংশোধনঃ
সূরা আল বাকারা, ২ নং সূরা, আয়াত ১৮২
তবে যদি কেউ অসিয়তকারীর (সম্পত্তি বণ্টনের নির্দেশদাতার) পক্ষপাতিত্ব অথবা অন্যায়ের আশংকা করে,[1] অতঃপর সে তাদের পরস্পরের মধ্যে (কিছু রদ-বদল করে) সন্ধি করে দেয়, তবে তার কোন দোষ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

[1] পক্ষপাতিত্ব করা বা ঝুঁকে পড়া-এর অর্থ হল, ভুলে গিয়ে কোন এক আত্মীয়র প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ে অন্যের অধিকার হরণ করে। আর ‘অন্যায়’-এর অর্থ হল, জেনে-শুনে এ রকম করা। (আইসারুত্ তাফাসীর) অথবা ‘অন্যায়’এর অর্থ হল, অন্যায় অসিয়ত, যা পরিবর্তন করা এবং তা কার্যকরী না করা অত্যাবশ্যক। এ থেকে জানা গেল যে, অসিয়তে ন্যায় ও সুবিচারের খেয়াল রাখা খুবই জরুরী। তা না হলে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অবিচার করার অপরাধে তার পারলৌকিক মুক্তি অতীব কঠিন হয়ে যাবে।

অছিয়তের সময় সাক্ষীঃ 

অছিয়ত করার সময় দুজন সাক্ষী রাখা উচিত, যেন পরবর্তী সময়ে মতানৈক্য সৃষ্টি না হয়। 

সূরা আল মায়দা, ৫নং সূরা, আয়াত ১০৬

হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের কারও যখন মৃত্যুসময় উপস্থিত হয়, তখন অসিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্য হতে[1] দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে, তোমরা সফরে থাকলে এবং তোমাদের মৃত্যুরূপ বিপদ উপস্থিত হলে[2] তোমাদের ছাড়া অন্য লোকদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী মনোনীত করবে। তোমাদের সন্দেহ হলে নামাযের পর তাদেরকে অপেক্ষমাণ রাখবে। অতঃপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘আমরা ওর বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করব না;[3] যদি সে আত্মীয়ও হয় এবং আমরা আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন করব না, করলে আমরা নিশ্চয় পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হব।’


[1] ‘তোমাদের মধ্য হতে’ এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, ‘মুসলমানদের মধ্য হতে’, আবার কেউ বলেন, অসিয়তকারীর গোত্রের মধ্য হতে। অনুরূপ ‘তোমাদের ছাড়া অন্য লোকদের মধ্য হতে’ এরও দুটি ভাবার্থ হতে পারে, অর্থাৎ অমুসলিম (আহলে কিতাব) হতে পারে অথবা অসিয়তকারীর গোত্র ব্যতীত অন্য গোত্রের লোক উদ্দেশ্য হতে পারে।

[2] কেউ যদি সফরকালে কঠিন রোগ বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়, যাতে তার বাঁচার আশা না থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় সফরে দু’জন ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রেখে যা অসিয়ত করতে চায় করবে।

[3] অর্থাৎ, (মৃত ব্যক্তি) অসিয়তকারীর ওয়ারেসগণের মধ্যে যদি সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে, যাদেরকে অসিয়ত করা হয়েছে তারা খেয়ানত অথবা পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে এমতাবস্থায় নামাযের পর সমস্ত মানুষের সামনে তাদেরকে (আল্লাহর নামে) শপথ করানো হবে; তারা বলবে, ‘আমরা শপথের বিনিময়ে এই নশ্বর জগতের সামান্য স্বার্থ উদ্ধার করছি না; অর্থাৎ মিথ্যা শপথ করছি না।’

 

অছিয়তযোগ্য সম্পদের পরিমাণ 

সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ অছিয়ত করা জায়েজ। এর চেয়ে বেশি অছিয়ত করা জায়েজ নয়। তবে যদি অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদের অছিয়ত অনুমোদন করে, তা হলে সে অছিয়ত বৈধ হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ওয়ারিশদের প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে (বুখারি : ৫৬৬৮)। 

৪০৬৩। সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)  বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন; এমন রোগের সময় যাতে আমি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রোগের কারনে আমার কি অবস্থা হয়েছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি, অথচ একটি মাত্র কন্যা সন্তান ব্যতীত আমার আর কোন ওয়ারিস নাই। সুতরাং আমি আমার সস্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সাদাকা করতে পারি কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক মাল সাদাকা করতে পারি? তিনি বললেন, না। বরং এক তৃয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও বেশি।

তোমার ওয়ারিসদের সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া তোমার জন্য উত্তম, এই অবস্থা থেকে যে, তাদের তুমি অভাবগ্রস্ত অবস্থায় ছেড়ে যাবে যে, তারা মানুষের নিকট হাত পাতবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যা কিছুই খরচ কর তাতে তোমাকে প্রতিদান দেয়া হবে। এমন কি, সে লোকমাটির বিনিময়েও যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে।

আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো আমার সাথীদের থেকে পিছনে রয়ে যাচ্ছি। তিনি বললেন, তুমি যখনই পিছনে থেকে (বেঁছে থেকে) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন আমল করবে তখনই তার দ্বারা তোমার সাম্মান ও মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। আর সম্ভবত তুমি পরবর্তীতেও থাকবে (অর্থাৎ দীর্ঘায়ু লাভ করবে।) এমনকি বহু সম্প্রদায় তোমার দ্বারা লাভবান হবে এবং বহু লোক তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (নবীজী দু’আ করলেন।) ইয়া আল্লাহ! আমার সাথীদের হিজরত অক্ষুন্ন রাখুন এবং তাদেরকে পাশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু সা’দ ইবনু খাওলার জন্য আফসোস! রাবী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কারন, তিনি মক্কায় মৃত্যুবরন করেছিলেন।

ইসলামে অসিয়ত/অছিয়ত/উইল এর প্রকার ও বিধান সম্পর্কে কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো।

অছিয়তের প্রকার : মৌলিকভাবে অছিয়ত চার প্রকার, 

১. ওয়াজিব। নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ আল্লাহ ও বান্দার যেসব হক অনাদায় থেকে যায় সে সম্পর্কে মৃত্যুর আগে অছিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। 

২. মুবাহ। ধনী ব্যক্তির সম্পদ সম্পর্কে অছিয়ত করা মুবাহ বা বৈধ।

৩. মাকরুহ। পাপাচারীর জন্য অছিয়ত করা মাকরুহ। 

৪. মুস্তাহাব। এ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে মুস্তাহাব। 

(দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার : ৫/৩১৫)

১. ঋণ পরিশোধের ওছিয়ত
যে সকল হক আদায় করা ওয়াজিব তার জন্য ওছিয়ত করাও ওয়াজিব। যেমন, একজন ঋণ নিয়েছে। এখন তার কর্তব্য হল, এই ওছিয়ত করে রাখা যে, তার সম্পদ থেকে যেন এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, ঋণের  খবর ঘরের লোকদেরও জানা থাকে না। এমতাবস্থায় তার মৃত্যুর পর জানা না থাকার কারণে কাছের লোকেরাও তা পরিশোধ করতে পারে না। ফলে এ হক তার যিম্মায় থেকেই যায়। ঋণও শোধ হয় না। সেও দায়মুক্ত হতে পারে না। পরকালে এর জন্য তাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

২. নামায-রোযার ফিদয়ার ওছিয়ত
কারো জীবনে কোনো নামায-রোযা কাযা হয়ে থাকলে জীবদ্দশাতেই তা আদায় করে ফেলা উচিত। খোদানাখাস্তা যদি কাযা আদায়ের সুযোগ না পাওয়া যায় তাহলে এমর্মে ওছিয়ত করে যাওয়া ফরয যে, আমরা যিম্মায় এত নামায, এত রোযা কাযা রয়েছে। এগুলোর ফিদয়া যেন আদায় করা হয়। যদি কেউ এমন ওছিয়ত না করে তাহলে যে কঠিন গুনাহগার হবে।

৩. যাকাত আদায়ের ওছিয়ত
কারো উপর কয়েক বছরের যাকাত ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও সে আদায় করেনি। তার কর্তব্য বিগত বছরগুলোর হিসাব করে যাকাত আদায় করা। জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর পূর্বে অন্তত ওছিয়ত করে যাবে যে, আমার এ পরিমাণ যাকাত অনাদায়ী রয়েছে। তা যেন আদায় করা হয়। অন্যথায় গুনাহগার হবে।

৪. বদলি হজ্বের ওছিয়ত
কারো উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। কিন্তু আদায় করতে পারেনি। তার কর্তব্য হল, বদলি হজ্বের ওছিয়ত করে যাওয়া। ওছিয়ত না করলে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। প্রথমত ফরয আদায় না করার গুনাহ। দ্বিতীয়ত মৃত্যুর পূর্বে ওছিয়ত না করে যাওয়ার গুনাহ।

৫. মৃত্যু-পরবর্তী অঙ্গদানের অছিয়ত
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর তার মালিকানা স্বত্ব নেই। তাই এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা বা অন্যের কাছে হস্তান্তর করার অধিকারও মানুষের নেই। আর অছিয়ত তথা উইল কেবল স্বীয় মালিকানাধীন সম্পদের মধ্যেই করা যায়। তাই মৃত্যু-পরবর্তী অঙ্গদানের উইলের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ইসলামে নেই। (মুসনাদে আহমাদ : ১৮১৫২, দুররুল মুখতার : ১০/৩৩৭)

৬. জানাজা পড়ানোর অছিয়ত
কেউ নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা জানাজা পড়ানোর অছিয়ত করে গেলে তার অছিয়ত পূরণ করা কতটুকু জরুরি? এর জবাব হলো, অছিয়ত করা ব্যক্তি যদি শরিয়ত কর্তৃক জানাজা পড়ানোর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত না হয়ে থাকে তা হলে এ ধরনের ব্যক্তির ব্যাপারে মাইয়েতের অসিয়ত পূরণ করা জরুরি নয়। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিই জানাজা পড়াবেন। অছিয়ত বাতিল বলে গণ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২২৪)

৭. গুনাহের কাজের অছিয়ত
গুনাহের কাজের অছিয়ত করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তা পূর্ণ করা যাবে না। করলে গুনাহ হবে (রদ্দুল মুহতার : ১০/৩৯৭)। আল্লাহ তায়ালা এসব বোঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন।


ওছিয়ত পূরণে জীবিতদের করণীয়
জীবিতদের কর্তব্য, মৃতব্যক্তির জায়েয ওছিয়ত পুরা করা। তবে মৃতব্যক্তি কোনো নাজায়েয ওছিয়ত করলে তা পুরা করা হারাম।

কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের ওছিয়ত করে গেলে জীবিতদের ঐ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর জন্য মৃতের সমস্ত সম্পত্তির প্রয়োজন হলেও।

কেউ যদি কোনো নেক কাজে সম্পদ ব্যয় করার ওছিয়ত করে যায়; যেমন, আমার সম্পত্তি দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করবে, কোনো মাদরাসায় ব্যয় করবে, কুরআন মাজীদ বিতরণ করবে, বিধবা-এতিমের জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, এমতাবস্থায় তার কাফন-দাফনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা সম্পন্ন করা জরুরি। ওয়ারিছগণ তা সম্পন্ন না করলে গুনাহগার হবে। তবে এ ওছিয়ত পুরা করতে যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তির প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অতিরিক্তটা ব্যয় করা আবশ্যক নয়। ওয়ারিসগণের ইচ্ছা। চাইলে স্বেচ্ছায় ব্যয় করবে, নইলে না। অবশ্য কোনো ওয়ারিস যদি নাবালেগ হয়, তাহলে তার অংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশের অধিক গ্রহণ করা কোনোভাবেই জায়েয হবে না।

কারো যিম্মায় নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত কাযা রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে যদি সে ওছিয়ত করে যায়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে ওছিয়ত পুরা করতে হবে। যদি তা পুরা করতে আরো বেশি সম্পদের প্রয়োজন হয় তাহলে তা পুরা করা যদিও ওয়ারিসদের উপর ওয়াজিব নয়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিসগণের কর্তব্য, নিজেদের অংশ থেকে তা আদায় করে দেওয়া।

গায়রে ওয়ারিসের জন্য ওছিয়ত করতে হলে
ওয়ারিস নয় এমন কাউকে নিজের সম্পত্তি থেকে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ওছিয়ত করা যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির চার ছেলে। জীবদ্দশায় তার এক ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেছে। বাকি তিন ছেলে তার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিল। তো তার মৃত্যুর পর তিন ছেলের মাঝে বণ্টন হবে। শরীয়ত তার মৃত ছেলে বা মৃত ছেলের সন্তানদের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ করে দেয়নি। এখন এ ব্যক্তি যদি তার মৃত ছেলের সন্তানদেরকে সম্পত্তি থেকে ভাগ দিতে চায়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে তাদের ব্যাপারে ওছিয়ত করে যাবে যে, আমার সম্পদের এই পরিমাণ তাদেরকে দেওয়া হবে। তবে কোনো ওয়ারিসের ক্ষেত্রে এরকম ওছিয়ত কার্যকর হবে না।

অছিয়ত এর বৈশিষ্ট্য ও শর্তসমূহঃ
১. শরয়ী পরিভাষায় অসিয়ত বলা হয়, স্বীয় সম্পত্তির একাংশ বিনিময় বিহীন কাউকে দান করা।
২. অসিয়ত এর পরিমাণ (ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর) সমূদয় সম্পত্তির  এক তৃতীয়াংশের বেশী হবে না। মুসলীম শরীয়ত মতে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি অছিয়ত করা যায় না ৷ এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করলে সেটা ধর্তব্য হবে না।
৩. অছিয়ত, অছিয়ত দাতার মৃত্যুর পর কার্যকারী হয়৷
৪. নিজেকে / কাউকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে, বা করার জন্য অসিয়ত করা যাবে না।
৫. হারাম / ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজে অসিয়ত কার্যকর হবে না।
৬. ওয়ারিশগণের উপর অসিয়ত প্রযোজ্য হবে না।
৭. শরয়ী ওয়ারিশদের জন্য অসিয়ত তাদের পরষ্পর সম্মতি বিহীন বৈধ নয়।
৮. সকল ওয়ারিশ একমত না হলে অসিয়ত পালন করা যাবে না।
৯.  সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন যে কোন সাবালক ব্যক্তি অছিয়ত / উইল করতে পারেন ৷
১০. অছিয়তকারীর ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণয়যোগ্য হতে হবে ৷
১১. অছিয়তকারীর পক্ষে অছিয়ত কোনো চুক্তি নয়। কাজেই অছিয়ত করার পর যত দিন সে জীবিত থাকে তত দিন তা প্রত্যাহার করার অধিকার তার থাকে।

যাদের উদ্দেশ্য অছিয়ত করা যায়ঃ
১। ব্যক্তির উদ্দেশ্যে
২। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে

ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আবার অছিয়ত দুই প্রকারঃ
১। ওয়ারিশের বরাবরে ৷
২। ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে

ওয়ারিশের বরাবরে সম্পাদিত অছিয়ত এর ক্ষেত্রে-
(ক) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিয়ত/উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।
(খ) অন্য ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে অছিয়ত/উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।
(গ) ওয়ারিশদের সম্মতি কার্যকর হবে অছিয়ত/উইল দাতার মৃত্যুর পর। 

ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তি বরাবর অছিয়ত বা উইলের ক্ষেত্রে বন্টন হিসাব
১. ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে উইল সম্পূর্ণ কার্যকরী হবে।
২. ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে উইল দাতার নিট সম্পত্তির ১/৩ এর উপর উইল কার্যকরী হবে।
৩. একজন মুসলমান তার সমূদয় সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উত্তরাধিকার নয় এমন কাউকে উইল করতে পারে না। তবে উত্তরাধিকারদের মধ্যে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উইল করতে পারে। ১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনত বৈধ।
৪. উইলদাতার মোট সম্পত্তি হতে যে ব্যয় পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি নিট সম্পত্তি বলে গণ্য হবে, অছিয়ত/উইল সর্বদা নিট সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হবে
(ক) উইল দাতার মৃত্যুর অব্যবহিত ৩ মাস পূর্বের ভৃত্য বা চাকরের পাওয়ানাদি।
(খ) মৃত্যু শয্যাকালীন খরচাদি।
(গ) মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের খরচ।
(ঘ) স্ত্রীর দেন-মোহরের পাওয়ানা পরিশোধ ব্যয়।
(ঙ) উইল প্রবেট এবং সাকসেশন সার্টিফিকেট ব্যয়।
(চ) ঋণ পরিশোধ (আগের ঋণ আগে পরিশোধ ভিত্তিতে)।
(ছ) ঋণ পরিশোধের আগে স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করতে হবে।
৫. ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করা হলে তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে সে উইল সম্পূর্ণ কার্যকর হবে, আর ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিতকারীর নিট সম্পত্তির ১/৩ অংশের উপর উইল কার্যকরী হবে।
৬. ফরজ কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- হজ্জ্ব পালন, যাকাত প্রদান ইত্যাদি অথবা ওয়াজিব কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- ফিতরা প্রদান, কোরবানী করা ইত্যাদি অথবা নফল কাজের উদ্দেশ্যে, যেমন- সরাইখানা, রাস্তা-পুল, এতিমখানা নির্মাণ ইত্যাদি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করা হলে তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকলে সে উইল সম্পূর্ণ কার্যকর হবে, আর ওয়ারিশদের সম্মতি না থাকলে অছিতকারীর নিট সম্পত্তির ১/৩ অংশের উপর উইল কার্যকরী হবে।

 

অছিয়ত বাতিল হবার কারণ / অছিয়তের সীমাবদ্ধতা / অছিয়ত প্রত্যাহার

অছিয়ত নামা দলিল অছিয়তকারী মারা গেলে তারপর অছিয়ত গ্রহন কারি সম্পত্তির মালিক হয়।
অছিয়তকারী জিবিত অবস্থাই অছিয়ত গ্রহন কারি সম্পত্তির মালিক হতে পারে না।


মুসলিম আইনে উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করার ক্ষমতা দুইটি শর্ত দ্বারা সীমাবদ্ধঃ
ক. ব্যক্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা
খ. সম্পত্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

ক- ব্যক্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

  • কোন উইলকারী ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকারী না থাকলে তিনি তার সকল ভু-সম্পত্তির অংশ যেকোনো অপরিচিত ব্যক্তি কে উইল বা দান করতে পারেন।
  • উইল দাতা উইল করলে এবং সকল উত্তরাধিকারীগন যদি এটি অনুমোদন না করে তাহলে যারা ঐ উইলটি অনুমোদন করবে বা মেনে নেবে কেবলমাত্র তাদের অংশ সংশ্লিষ্ট উইলে দায়যুক্ত হবে।অর্থাৎ উইল গ্রহীতা শুধুমাত্র তাদের অংশপ্রাপ্ত হবে যারা উইল টি অনুমোদন করেছে।
  • মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী একজন মুসলমান তার সকল উত্তরাধিকারীগণকে বঞ্চিত করে শুধুমাত্র একজন উত্তরাধিকারীকে তার সকল সম্পত্তি বিলি করতে পারবে না।
  • একজন উইলদাতার শিয়া আইন মতে তার অন্যান্য উত্তরাধিকারী গণের অনুমতি বা সম্মতি ছাড়া তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ যেকোনো উত্তরাধিকারীকে উইলে দান করতে পারবে, কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির বেশি দান করতে চাইলে, উইল দাতার অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
  • মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে উইলকারী কর্তৃক কোন উইল করা হলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। যদি এটি এক-তৃতীয়াংশের বেশি না হয়।
  • কোন ব্যক্তির উদ্দেশ্য জনিত কারণে যদি উইলদাতা কর্তৃক উইল করার পর সেই ব্যক্তি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে উইলদাতার মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে তাহলে সেই উইল বাতিল বলে গণ্য হবে।
  • উইলকারী তার মৃত্যুর আগে যদি এমন কোন অস্তিত্বহীন ব্যক্তি বা অজাত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল করে, তাহলে ওই উইল অবৈধ বলে গণ্য হবে। তবে উইল করার দিন হতে ছয় মাসের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়ে মাতৃগর্ভের সন্তানকে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি দান করতে পারে।
  • উইলদাতার মৃত্যুর পর যেহেতু উইল কার্যকর হয়,সেহেতু উইলদাতা জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় যেকোনো সময় তার উইল রদবদল করতে পারে।

খ- সম্পত্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

  • মুসলিম বিধান আইন অনুযায়ী একজন উইলদাতা তার যেকোনো পরআত্মীয় কে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ উইল মূলে দান করতে পারে, তবে এর অধিক করতে পারবেনা।
  • মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী একজন উইলদাতা তার মৃত্যুর পর যারা তার উত্তরাধিকারী বলে গণ্য হবে ঐ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কোন সম্পত্তি উইল মূলে দান করতে পারবে না। এরূপ উত্তরাধিকারী বরাবর উইল আইনগত ভাবে অগ্রাহ্য হয়।
  • উইলদাতা কোন উত্তরাধিকারীর বরাবরে উইল মূলে কোন সম্পত্তি দান করলে এটি মূলত আইন সংগত হবেনা। কিন্তু যদি উইল দাতার মৃত্যুর পর তার অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ এটি মেনে নিলে সংশ্লিষ্ট উইলিটি আইনসিদ্ধ ও কার্যকারী হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে আত্মীয়র বন্ধন ছিন্ন হয় না।
  • কোন উইলদাতা মুসলিম আইনের পরিপন্থী অর্থাৎ মুসলিম আইনে অবৈধ ঘোষিত এমন কোন ক্ষেত্রে উইল করতে পারবেনা।
  • কোন মুসলমান শর্তসাপেক্ষ উইল করতে পারবেনা। এই রূপ শর্তসাপেক্ষে উইল অবৈধ বলে গণ্য হবে।
  • একজন উইলদাতা ভবিষ্যতে পাবে এইরূপ উইল পূর্বক দান করতে পারবে না। ভবিষ্যতে বিল অবৈধ।
  • এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি উইলদাতা কর্তৃক উইল করার পর অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ তা উয়ারিশ গনের মধ্যে বন্টন করা হয়।

অছিয়ত বাতিল হবার কারণ / অছিয়তের সীমাবদ্ধতা / অছিয়ত প্রত্যাহার 

মুসলিম আইনে একটি অছিয়ত কার্যকারী হয় অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর। সুতরাং অছিয়তকারীর মৃত্যুর পূর্বেই যে কোন সময় অছিয়তটি প্রত্যাহার বা রদ করতে পারে। প্রত্যেকটি অছিয়ত প্রত্যাহার যোগ্য। এই অছিয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এইরুপ প্রত্যাহার লিখিত বা অলিখিত হতে পারে আবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবেও হতে পারে।তবে প্রত্যাহার যে প্রকারেই হোক না কেন তা গ্রহণযোগ্য। যে সকল পদ্ধতিতে একজন অছিয়তকারী তার অছিয়তটি প্রত্যাহার বা রদ করতে পারে তার নিম্নরূপ

  • অছিয়তদাতা তার কৃত উইল লিখিত অথবা মৌখিকভাবে ঘোষণার মাধ্যমে রদ বা প্রত্যাহার করতে পারেন।
  • অছিয়ত গ্রহীতার উদ্দেশ্যে উইল দাতা কোন সম্পত্তি উইল করার পর যদি এটি আবার অন্যের বরাবরে দান বা বিক্রয় করা হয়, তবে এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উইলিটি রদ বা প্রত্যাহিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। এটি পরোক্ষ প্রত্যাহার।
  • অছিয়ত কৃত বস্তুকে যদি উইলকারী অন্য বস্তুতে রূপান্তরিত করে,তবে বুঝতে হবে যে, সে তার অছিয়তটি প্রত্যাহার বা রদ করেছেন। যেমন-কোন ব্যক্তি তার একটি গাছ অন্যের বরাবরে উইল করেছে, পরবর্তীতে সে যদি ওই গাছকে আসবাবপত্রে রূপান্তরিত করে তাহলে বুঝতে হবে উইলকারী তার উইল প্রত্যাহার বা রদ করেছেন।
  • অছিয়তকারী উইলকৃত সম্পত্তিতে যদি মালিকানা স্বত্তে অবসান ঘটে তবে সংশ্লিষ্ট উইলঠি স্বাভাবিকভাবে রদ হয়ে যাবে।
  • অছিয়তদাতা উইলের মাধ্যমে দানকৃত সম্পত্তিতে যদি পরবর্তীকালে অতিরিক্ত অন্য কিছু তৈরি করে, তবে সংশ্লিষ্ট উইলটি রদ হয়ে যাবে। যেমন-উইলকারী যদি উইলকৃত সম্পত্তিতে পরবর্তী সময়ে সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করে তাহলে ওই উইলটি রদ হয়ে যাবে।
  • অছিয়তদাতা আদালতের মাধ্যমেও তার কৃত উইলটি প্রত্যাহার বা রদ করতে পারেন।
  • অছিয়তদাতা উইলকৃত সম্পত্তিতে এমন কোন কাজ করার ফলে যদি পরবর্তীতে ঐ সম্পত্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে উইলটি প্রত্যাহার বা রদ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
  • সুতরাং অছিয়তদাতার মৃত্যুর পূর্বে যে কোন সময় একটি উইল প্রত্যাহার বা রদ করতে পারেন। একটি উইলের রদ বা প্রত্যাহার নির্ভর করে উইলদাতার ইচ্ছা ও বিবেচনার উপর। এইরুপ ক্ষেত্রে আদালতকে উইল দাতার কার্যাবলী বিবেচনা করতে হবে যে, উইলকারীর ইচ্ছা ছিল কিনা। যদি উইলদাতা কখনো কোন বিল করেছেন বলে স্বীকার না করেন, তবে সেই ক্ষেত্রে একে উইলের প্রত্যাহার বা রদ করন বলে গণ্য করা যাবে না।

Difference between Waqf and Osiot (ওয়াকফ ও অসিয়তের মধ্যে পার্থক্য)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.